ভোলা প্রতিবেদক ॥ ভোলায় দুই দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১২৫টি গ্রামীণ সড়ক। এ ক্ষতি টাকার অংকে হিসাব করলে দাঁড়ায় ১৪৮ কোটি টাকা। সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ওইসব এলাকার মানুষ। বন্যার কারণে বেশিরভাগ রাস্তা এখন চলাচলের অনপুযোগী হয়ে পড়েছে। কিছু সড়কে আবার যানবাহন চলাচলও বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় দ্রুত সড়ক সংস্কারের দাবি ভুক্তভোগীদের। সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়ক জুড়ে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে, কোথায় আবার ভেঙে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে পুরো রাস্তা। আর তাই অনেক স্থানে সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে যানবাহন চলাচল। কিছুদিন আগে ভোলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া দুই দফার বন্যা ও টানা বর্ষণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে জেলার ১২৫টি সড়কের ৫৯১ কিলোমিটার ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এসব সড়ক দিয়ে এখন যানবাহন চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। তাই দ্রুত সড়ক মেরামতের দাবি এলাকাবাসীর।
ভোলা সদরের রাজাপুর, ইলিশাসহ বিভিন্ন সড়ক এখন বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। একই অবস্থা যেন জেলার ছয় উপজেলার গ্রামীণ সড়কের। সড়কের এমন নাজুক অবস্থার কারণে অনেক স্থানে হেঁটে যাতায়াত করতে হয় পথচারী ও এলাকাবাসীকে। এতে বেশি বিপাকে পড়ছেন রোগী, নারী এবং শিশুরা। কবে সড়কগুলো মেরামত হবে তাও জানে না এলাকাবাসী। বন্যার পর দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে জীর্ণদশার এই সড়ক দিয়েই দুর্ভোগ উপেক্ষা করে যাতায়াত করতে হচ্ছে তাদের।
ভোলা সদরের রাজাপুর ইউনিয়নের জনতা বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে কন্দকপুর, চর মোহাম্মদ আলী, বাহাদুরপুর ও মেদুয়া এ চার গ্রামের চলাচলের একটি সড়ক জনতাবজার টু চর মোহাম্মদ আলী পর্যন্ত পুরো রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জোয়ারের পানিতে রাস্তা বিধ্বস্ত হয়ে ভেঙে গেছে। সেখানে দুটি সাঁকো নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। ওই সড়কে এখন যানবাহন চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। স্থানীয় এলাকার রুহুল আমিন, মনির, হানিফসহ অন্যরা জানালেন, জোয়ারের পানিতে পুরো সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত। সড়কের চারপাশে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এ সড়কে চলতে গিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এমন অবস্থা যে এখন হেঁটে যাতায়াত করতে হয়। স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল খলিল জানান, এ সড়কটি ১০ হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা ছিল, কিন্তু জোয়ারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বেহাল অবস্থা হয়েছে। জনসাধারণের চলাচলের জন্য আমরা দুটি সাঁকো মেরামত করে দিয়েছি। দ্রুত রাস্তা সংস্কার করা না হলে মানুষের দুর্ভোগ কমবে না। বিশেষ করে অসুস্থ রোগীদের দুর্ভোগ অনেক বেশি।
জেলা এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের মধ্যে ভোলা সদরে ৩১টি সড়ক। এখানে ১৩৫ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত, ক্ষতির পরিমাণ ৩৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। অন্যদিকে দৌলতখান উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৭টি সড়ক। সেখানে ৩৫ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত সড়কে টাকার অংকে ক্ষতির পরিমাণ ১৩ কোটি টাকা। লালমোহন উপজেলায় ১০টি সড়কের ৪৪ কিলোমিটার বিধ্বস্ত হয়ে ক্ষতি হয়েছে ৭ কোটি টাকা। চরফ্যাশন উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের সংখ্যা ২৫টি। এখানে ১৭৬ কিলোমিটার সড়ক ভেঙে ৩৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। মনপুরা উপজেলা ৬টি সড়কের ৪৪ কিলোমিটার ক্ষতি হয়েছে যা টাকার অংকে ১২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। অপরদিকে তজুমদ্দিন উপজেলায় ১১টি সড়কে ৩৭ কিলোমিটারে ক্ষতি হয়েছে ২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
এ ব্যাপারে ভোলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের তালিকা তৈরি করে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে নিদের্শনা এলে সড়ক সংস্কার কাজ শুরু হবে। এদিকে জেলার সাত উপজেলায় এলজিইডির দুই হাজার কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। যার চারভাগের একভাগ ক্ষতিগ্রস্ত। টাকার অংকে ক্ষতির পরিমাণ ১৪৮ কোটি টাকা। দ্রুত সড়কগুলো মেরামতের দাবি ভুক্তভোগীদের।
Leave a Reply